Thursday, November 17, 2016

ঝিনুকের পুনর্জন্ম শামুকের মৃত্যু



কালো স্যাঁতস্যাঁতে  দিন।

বীভৎস বিস্মৃতির গলিত গন্ধে ভরপুর কর্দমাক্ত রাস্তা ,
তার মধ্যে বুকে হেটে চললে সে ।

টিপটিপ করে বৃষ্টি পড়েই চলেছে
খেলুড়ে সাপ দেখেগেলো হেসে,
গর্বিত খোলস ভেঙে আছে একধার দিয়ে ।
এতো হওয়াই উচিত ।
ধর্মের কল বাতাসে নড়ে ।

রাস্তার ঘোলা জলে পরাজিত শামুক থরথর করে কাঁপছে ,
আমায় নিয়ে যাও আমায় নিয়ে নাও ।

যে কচি হাতগুলো রাস্তার জলে নৌকাভাসানোর  খেলায় ব্যস্ত,
তাদের কেউ ফিরেও তাকালোনা সেই কালচে-ধূসর হলদে ছোপছোপ খোলস-আলা
শামুকের দিকে ,
ল্যাল্ল্যালে ল্যাত ল্যাতে  নরম কুচকুচে মাংসল পিণ্ড তাই গেলো আরো গুটিয়ে;
একটুএকটু করে বুকে ভর করে চললো সে অনেক দিন  আগের  সাজানো পাহাড়ী বাগানে ।



সে বাগান তখন তছনছ ঝড়ে ।
বাজে বাজ পড়ে ছারখার বটগাছ ।

শুকনো গুঁড়ি জানেনা আবার কীকরে নতুন ভাবে বাঁচবে ।

বিশ্বাসঘাতক যে পাখি উড়েগেছিলো অনেকানেক দিন আগে ,
আর ফিরে আসেনি।.

এসেছে বাঁদরের  দল ,
উজাড় করে নিয়ে গেছে যত ফলমূল,
আর মুটকে দিয়েগেছে  সব দৃপ্ত নিরীহ পেঁপে-গাছের মেরুদন্ড ।

মৃতপ্রায় বটগাছের গোড়ায় শামুক এসেবললে
ক্ষমা করো ।

আবারো ।

শুকনো অসহায় মুখতুলে বটগাছ, উদাস বটগাছ ভাবে চিনি কী এঁকে ?

হ্যাঁ ,
এতো সেই বাউন্ডুলে পাখি ।
উড়ে বেড়াতো এখানে ওখানে ।

নরম দানা পেতে চোখ পাকাতো আমার ডালে এসে ,
আর সব কাঠবিড়ালির দল ভালোবেসে উজাড় করতো তাদের দানা, ভাগ করবে বলে ।
বৃষ্টিতে ভিজলে ডানা ঝাপ্টে বানাতো রামধনু।

"আমার সেই উড়ন্ত পাখি সেই হলুদ পাখি কি শেষ মেষ শামুক হয়েগেলো"?

বটগাছ দুঃখে আরো শুকিয়ে আরো বুড়ো হয়েগেলো


মৌনী ঝলসানো বটগাছ তপস্যায় দাড়িয়ে
হাতড়ে ফেরে পুরোনো সবুজ দিনের স্মৃতি ।

ডাক পাঠায় আকাশের দিকে ।
পুরোনো পাখিরা আর ফিরে আসেনা
বাগানে তখন দারুন গ্রীষ্ম ।
মৃতপ্রায় ন্যাড়া গাছের দল ধুঁকছে সারেসারে দাড়িয়ে ।

কবে আবার বসন্ত আসবে কে জানে।

শামুক বললো ভয় পেয়োনা ।
আমি বৃষ্টির দেখা পেয়েছি।
সেই কোন কালে হলুদ-পাখি হয়ে জ্বরে ভীজে মরেগেছিলাম ।
এবার শামুক হয়ে স্যাঁৎস্যাঁতে দিনে কাঁপতে কাঁপতে ফিরেছি অনেক কষ্টে ।

এবার আর   ভুল হবেনা।

এই বলে শামুক চললো শুকনো খটখটে বাগানের এককোনে কাঁটাগাছের ঝোপেরদিকে ,

যেখানে প্রজাপতিরা দলবেঁধে উড়ছে রঙিন বেগনে ফুলের উপরে ।

শামুককে কেউ পাত্তাই দিলোনা ,
একটা প্রজাপতি শুঁড় পাকিয়ে বললো ,
"সখ কম নয়,শামুক হয়ে এসেছে বেগুনে ফুলের দিকে" ।

আরেকটা প্রজাপতি বললো ,
"থাকনা ,আসুকনা।.একটু বাদেই মজা টের পাবে।
কাঁটা ফুটলো বলে" ।

একটা মৌমাছি ছিল পাশেই,
বললো ,"বাগানে ঢুকলো কিকরে বলতো ?
নতুন মালী তো সব শামুক তুলে ফেলে দেয় ।

এ ব্যাটা নিশ্চয় মিথ্যাবাদী ।
আবার দেখো খোলস টাও ভাঙ্গা ।
কি বিচ্ছিরি কালো স্যাঁৎ স্যাঁতে খোলস,মাগো।

দাঁড়া ডাকি অন্য মৌমাছিদের ,সবাই মিলে দেখাচ্ছি ব্যাটা কে মজা" ।

গুনগুন ভোঁ শুনে মালী এসে হাজির ।

কাঁটাঝোপের কাছে নোংরা শামুক-কে ঝাঁটা মেরে ফেলেদিলো সে আবর্জনার স্তূপে ।
"থাকব্যাটা ওখানে" ।
ফেটে চৌচির হয়েগেলো খোলসের অনেকটা  ।



কদিন বাদে সব আবর্জনা গিয়ে পড়লো সমুদ্রে ।
থলথলে কালো মাংসল শামুক তখন মৃত্যুর প্রতীক্ষায় ।

কোনোরকমে সাঁতরাতে গিয়ে দেখে পাশে শঙ্খশুভ্র ঝিনুকের দল ,
যাচ্ছে ভেসে ডুবসাতাঁরে পাড়ি দিয়ে ।

"আমায় নেবে তোমাদের সাথে"?

"এরকম কুৎসিত মাংসল শামুক তো আগে দেখিনি।তোমায় বিশ্বাস করি কি করে?
তোমার খোলস কোথায়"?

"ভেঙে গেছে অনেক কষ্টে "

"ঠিক আছে,আসো ।কিন্তু সাবধান ।আমরা ঝিনুকের দল ,প্রমান করো তুমিওঝিনুক হতে পারবে ।"

শামুক মনে করলো ,

বহুজন্ম আগে সেও এক ঝিনুক ছিল বটে।
শঙ্খশুভ্র নয় যদিও।.
নীলচে সাদা হয়ে ভেসে বেড়াতো বঙ্গোপসাগরের ঢেউয়ে

শামুক জানেনা কিকরে ঝিনুক হতে হয় ,
অনেক ভেবে সে আবার মরেগেলো।

কী কান্ড |

এবার সে সত্যি করেই
হয়েউঠলো একটা উদাসী নীলচে ঝিনুক ।
শঙ্খশুভ্র ঝিনুকের দল,তাচ্ছিল্যে আর সতর্কতায় মেনেনিল ।

হলোই বা নীলচে,এখন ঝিনুক তো ।

দেখাযাক ।

No comments: